রাজকুমার মুখার্জী, বং 24 ডেস্কঃ "উপবাস" - যার সাধারণ নাম উপোস। নানারকম খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ না করলে সেটাই উপবাস বা উপোস। উপোস ...
রাজকুমার মুখার্জী, বং 24 ডেস্কঃ "উপবাস" - যার সাধারণ নাম উপোস। নানারকম খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ না করলে সেটাই উপবাস বা উপোস। উপোস বা উপবাস সব ধর্মের মানুষ পালন করেন ভিন্ন ভিন্ন নামে। বাংলায় উপবাস শব্দের সমার্থক শব্দ হিসাবে আমরা অনশন, অনাহার ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করি। খ্রিস্টানরা উপবাস করলে বলা হয় ‘’ফাস্টিং"। মুসলিমরা উপবাস করলে বলা হয় "সিয়াম"। বিপ্লবীরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয় ‘’অনশন"। আর, মেডিক্যাল সায়েন্সে উপবাস করলে, তাকে বলা হয় "অটোফেজি"।
২০১৬ সালে জাপানের ডাক্তার ‘ওশিনরি ওসুমি’কে অটোফেজি (Autophagy) আবিষ্কারের জন্যে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়।
যাই হোক, ‘Autophagy‘ কি ? Autophagy শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ। অটোফ্যাগোসাইটসিস বা অটোফ্যাগোস থেকে এর উৎপত্তি autophagy শব্দটির অর্থ আত্ম ভক্ষণ।
সারা বছর শরীরে কোষগুলো খুব ব্যস্ত থাকার কারণে, কোষগুলোতে অনেক আবর্জনা ও ময়লা জমে যায়। শরীরের কোষগুলো যদি নিয়মিত তাদের ময়লা পরিষ্কার করতে না পারে, তাহলে কোষগুলো একসময় নিষ্ক্রিয় হয়ে শরীরে বিভিন্ন প্রকারের রোগের উৎপন্ন করে। ক্যান্সার বা ডায়াবেটিসের মতো অনেক বড় বড় রোগের শুরু হয় এখান থেকেই। মানুষ যখন খালি পেটে থাকে, তখন শরীরের কোষগুলো অনেকটা বেকার হয়ে পড়ে। কিন্তু তারা তো আর অলস হয়ে বসে থাকে না, তাই প্রতিটি কোষ তার ভিতরের আবর্জনা ও ময়লাগুলো পরিষ্কার করতে শুরু করে দেয় । কোষগুলোর আমাদের মতো আবর্জনা ফেলার কোন জায়গা নেই বলে, তারা নিজের আবর্জনা নিজেই খেয়ে ফেলে। মেডিক্যাল সায়েন্সে এই পদ্ধতিকে বলা হয় অটোফেজি। Autophagy র চারটি রূপ। ম্যাক্রফাজি - এটা প্রধান পন্থা যা ক্ষতিগ্রস্থ কোষ নির্মূল করতে ব্যবহৃত হয়; চ্যাপ্রেন - অত্যন্ত জটিল পদ্ধতি এবং এর প্রয়োগ অতি সন্তর্পনে করাই বাঞ্ছনীয়। এছাড়াও আছে আরও দুটি রূপ - ম্যাইটফাজি এবং লিপোফাজি।
এবার আসি ধর্মের কথায়। হিন্দু ধর্মে উপবাস কে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। স্বল্প অনশন, অর্ধ অনশন এবং পূর্ন অনশন। কথিত আছে মহাভারতে পিতামহ ভীষ্ম, যুধিষ্ঠির কে উচ্চ জ্ঞান লাভের জন্য উপবাসের কথা বলেন। অর্থাৎ, উপবাসের মাধ্যমে সংযম, সংযমের মাধ্যমে জ্ঞান। ধর্মীয় উৎসবে উপবাস হিন্দু ধর্মের একটি প্রচলিত রীতি - একথা আমরা সবাই জানি। আবার শ্রীবিদ্যায় উপবাস করতে নিষেধ করা আছে। এই তান্ত্রিক মতে বলা হয় - দেবী মানুষের শরীরে বাস করেন। নিজে ক্ষুধার্ত থাকা মানে দেবীকে অভুক্ত রাখা। শ্রীবিদ্যায় বলে কেবল মাত্র মাতা বা পিতার মৃত্যুতে উপবাস করা চলে।
বৌদ্ধ ধর্মে ভিক্ষুরা বিনয় নীতি অনুসরণ করেন। দিনে একবার আহার - দুপুরে একবার আহার গ্রহণ। ভগবান তথাগত প্রথম জীবনে দুজন শিক্ষকের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। সেই সময় তিনি দিনে একবার এবং স্বল্প আহার গ্রহণ করতেন। বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারে, সপ্তাহে একদিন অস্টবিধানের কথা বলা আছে। অর্থাৎ সপ্তাহের একদিন দুপুরের পর থেকে পরদিন সকাল অবধি উপবাস।
খ্রিস্ট ধর্মে বাইবেলে ঈশাই জাকারিয়া, বুক অফ ড্যানিয়েল, উপবাসের কথা বলা আছে। এখানে উপবাসের ধারণাটা ভিন্ন। খাদ্য বা পানীয় পরিহারের বদলে, ঈশ্বরের আদেশ অনুসারে গরীব ও দুস্থ মানুষের সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। এই সাহায্য অবশ্যই নিজের ভোগ্য বস্তুর অংশ থেকে দান। প্রভু যীশু ঈশ্বরের বাণী প্রচারের আগে দীর্ঘ চল্লিশ দিন অনাহারে ছিলেন - একথা আমরা বাইবেল থেকে জানতে পারি। খ্রিস্ট ধর্মের প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অনেকেই চল্লিশ দিন উপবাস করেন।
ইহুদি ধর্মের মানুষ বছরে ছয়দিন প্রথাগত উপবাস করেন। সিনাগগে উপাসনা ইহুদীদের একটি প্রচলিত রীতি। ইহুদি ক্যালেন্ডারে "ইয়াম কিপ্পুর", বছরের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন পবিত্র দিন। এই দিনে সিনাগগে উপাসনার চাইতে উপবাসের গুরুত্ব অনেক বেশী। এছাড়া "তিশা বাব" আর একটি গুরুত্ব পূর্ন দিন। ২৫০০ বছর আগে এই দিনে জেরুজালেমে পবিত্র মন্দির ধ্বংস করা হয়।
জৈন ধর্মে বিভিন্ন উপবাসের কথা বলা আছে। চৌবিহার, ত্রিবিহার - এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। জৈন ধর্মে যে কোন উপবাস মানেই অহিংসা। তাই উপবাসের সময় ফোটানো জলপান নিষিদ্ধ। কোন ব্যক্তি যদি টানা আটদিন উপবাস করেন, তাকে "আত্থাই" বলে। সেরকম দশদিন কে "দশ লক্ষণ", একমাস কে "মশ খমন" বলা হয়। এছাড়াও অনেকে দিনে একবার আহার করেন। তাদের "একাসন" দুইবার আহার করলে "বিয়াসন" বলে আখ্যা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞানী ওশিনরি ওসুমি আবিষ্কারের বহু আগে থেকেই উপবাস, যা কমবেশি প্রায় সব ধর্মের মধ্যেই প্রচলিত ছিল।
,👍👍👍👍
উত্তরমুছুনআগকার দিনে আমাদের মা, ঠাকুমারা অনেক নিয়ম, ব্রত ইত্যাদি পালন করতেন। আমরা বর্তমান প্রজন্ম এসব অনেক কিছুই কু-সংস্কার বলে এড়িয়ে যাই, অনেক সময় তাচ্ছিল্যও করি। তারা হয়তো সেভাবে এর ব্যাখ্যা দিতে পারতেন না। কিন্তু এর প্রতিটির পেছনেই বিজ্ঞান থাকতো। আগেকার দিনে মুনি-ঋষিরা বিভিন্ন ধর্মের মাধ্যমে এভাবেই মানুষ কে শিক্ষা দিতেন। এখন মানুষ এগুলোকেই নতুন রূপে চিনছে।
উত্তরমুছুনএকদম ঠিক কথা
মুছুন